সাধারণত ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে কথা হয় পরিকল্পনা, একাদশ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে। তবে বাংলাদেশের পরপর তিন সংবাদ সম্মেলনে মূল বিষয় ছিল ‘অবসর’ প্রসঙ্গে। কানপুর টেস্টের আগের দিন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব আল হাসান।
গোয়ালিয়রে প্রথম টি-টোয়েন্টির আগে সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবসরের ইঙ্গিত দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আর দিল্লিতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির আগে অবসরের ঘোষণা দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে অবসর ঘোষণা মাহমদউল্লাহ রিয়াদের বক্তব্যের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-
টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর প্রসঙ্গ
এই সিরিজের শেষ ম্যাচের পরেই আমি টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেব। আসলে এটা আমি এই সফরে আসার আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম। আমি আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচক এবং বোর্ড সভাপতিকেও সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। আমি মনে করি, এটাই সঠিক সময় এই সংস্করণ থেকে সরে গিয়ে সামনে ওয়ানডে যা আছে, সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার। আমার জন্য এবং পরের (টি-টোয়েন্টি) বিশ্বকাপের কথা যদি ভাবি, দলের জন্যও এটাই সঠিক সময়।
কোথায় থেকে অবসর ভাবনার শুরু
সত্যি বলতে আমি যখন ভারত সিরিজের জন্য অনুশীলন করছিলাম, তখন থেকেই চিন্তা ভাবনা শুরু করেছিলাম। প্রথমে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, ওরা বলল যে এটা হয়তো সেরা সময় না। তখন আমি আবার ওদের বুঝাই। এরপর ওরা বুঝেছে এবং নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বললাম কোচ-অধিনায়কের সঙ্গে কথা বললাম। তখন মনে হয়েছে এখনই অবসর ঘোষণার সেরা সময়।
কোনো আক্ষেপ ছিল কি না
আলহামদুলিল্লাহ আমরা কোনো আক্ষেপ নেই; এক ফোটাও আক্ষেপ নেই। দেশের হয়ে অনেক বছর খেলা ব্যক্তিগতভাবেই ভালো লাগা ছিল। আমি যতটুকু খেলেছি, টি-টোয়েন্টি। আমরা যতদূর মনে হয়, ২০০৭ এ অভিষেক হয়েছে। ১৭ বছর—আমি জানি না কতটুকু ভালো করেছি, কতটুকু করেছি দলের জন্য। কিন্তু আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।
ক্যারিয়ারের খারাপ কিংবা ভালো স্মৃতি
২০১৬ ব্যাঙ্গালুরু প্রতিপক্ষ ভারত। ওই আমার মনে হয় অন্যতম হতাশার মুহূর্ত ছিল। কিন্তু আবার ওটাই আমার জীবন বদলে দেওয়ার মুহূর্ত ছিল। ওটা ছিল অনেক বড় শেখা। এ ছাড়া সবচেয়ে ভালো মুহূর্ত হয়তো নিদহাদ ট্রফি।
অবসর পরিকল্পনায় ‘লিগ্যাসি’ না থাকা
না, আমি এরকম কিছু মনে করি না। এটা নির্ভর করে ব্যক্তির ওপর। আমি যদি মনে করি বাংলাদেশ থেকে অবসর নেব। হতে পারে এটা অনেক দেরি হয়ে যাবে। আমার মনে হয়, এটাই সঠিক সময় এবং আমি একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার ও দলের জন্য।
টি-টোয়েন্টিতে উন্নতির রোডম্যাপ
আমরা উন্নতি করিনি এরকম আমি বলব না। বর্তমান কিংবা অতীতে আমরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দারুণ কিছু অর্জনও করেছি। হয়তো ধারাবাহিকতার জায়গায় আমাদের সমস্যা ছিল। টি-টোয়েন্টি খেলতে গেলে আপনি যদি বেশি চিন্তিত অনুভব করেন, তাহলে আপনি পারফর্ম করতে পারবেন না। আমরা যদি দল হিসেবে ওটা পার হতে পারি, তাহলে ভালো করা সম্ভব।
ফিনিশিং রোলে ব্যাটিং করাটা
টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিংয়ে ৬ কিংবা ৭ এ ব্যাটিং করা হয়তো সবচেয়ে কঠিন কাজ। কারণ, আপনি যদি ৫টা ইনিংস খেলেন; তাহলে ৩টাই খারাপ হবে। একটায় হয়তো ভালো ব্যাটিং করে দলকে জিতিয়ে আনতে পারবেন, আরেকটায় গড়পড়তা হবে। নির্দিষ্ট করে বললে ওই পজিশনে ওই ব্যাটারের জন্য ওটাই কাজ। মিডিয়া কি বলল না বলল সেটা কোনো ম্যাটার করে না। আসলে টিম ম্যানেজমেন্টের বিষয় থাকে যে ওই সময় ওই কাজটাই করতে হয়।
ট্রফি না জেতার আক্ষেপ
ট্রফি নেই এটা একটা খারাপ লাগা। কিন্তু এটা আমি মানতে রাজি না যে, অর্জন নেই। ট্রফি জেতাই যদি বেঞ্চ মার্ক হয়, তাহলে পৃথিবীর অনেক লিজেন্ডদেরই সম্মান দেওয়া হতো না। আমি অনেকের কাছ থেকে শুনি এমনকি সাংবাদিকদের কাছ থেকেও শুনি যে আমরা বা পঞ্চপাণ্ডব শিরোপা জেতেনি। দেখুন, আমি যখন ২০০৭ সালে ড্রেসিংরুমে ঢুকি, তখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবস্থা এই সময়ের মতো ছিল না। আর এটা শুধু পঞ্চপাণ্ডবনা, সবার অবদান আছে। কখনই শিরোপার ওপর হিসেব করে সাফল্য-ব্যর্থতা হিসেব করা উচিত না।
কিছু কথা বলার কথা ছিল, সেটা কবে
আমি ভুলি নাই, অবশ্যই বলব। এখনও সঠিক সময় হয়নি। আমি খেলা শুরু করেছি নিজের ইচ্ছায়, বিদায়ও নেব নিজের ইচ্ছায়। আর ওটা আমরা সময় মতো অবশ্যই পাবেন, গরম খবর।