রাজনীতি

’৭২-এর সংবিধান বাতিল-রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক

’৭২-এর সংবিধান বাতিল-রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক


’৭২-এর সংবিধান বাতিল এবং রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের দাবিতে যৌথভাবে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলনের এই ঐক্যের ডাক দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্র-জনতার গণদাবি মুজিববাদী সংবিধানের রাষ্ট্রপতি ও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের দোসর সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে অপসারণ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ দফা দাবির সাথে জাতীয় নাগরিক কমিটি একাত্মতা পোষণ করে। ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রথম পর্ব তথা গণহত্যাকারী হাসিনার পতন ঘটেছে এবং বাংলাদেশের একমাত্র শাসক হিসেবে তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন। কিন্তু তার নিয়োগকৃত এবং তার পা ছুঁয়ে সালাম করতে চাওয়া আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অবশেষ রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু স্ব-পদে বহাল আছেন। অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় তরঙ্গে ছাত্র-জনতা যখন রাষ্ট্রের পুনর্গঠনমূলক কাজে নিবেদিত, ঠিক তখনই রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকা চুপ্পু দাবি করেছেন যে- ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নাই’। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি জুলাইয়ের শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগকে অপমান এবং জনগণের সাথে মিথ্যাচারের মাধ্যমে শপথভঙ্গের অপরাধ করেছেন। এই বক্তব্যের পরে তিনি রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থাকার সকল যোগ্যতা হারিয়েছেন। সুতরাং, তিনি আর এক মুহূর্তও স্ব-পদে বহাল থাকতে পারেন না।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বিগত ১৫ বছরে মুজিববাদী আওয়ামী লীগ সীমাহীন গুম-খুন-নির্যাতন-লুটতরাজ, বিরোধী মতের ওপর চরম দমনপীড়ন এবং বাংলাদেশকে কার্যত ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করার মধ্য দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলেছিল। দেশে কায়েম হয়েছিল এক নজিরবিহীন ফ্যাসিবাদ এবং চরম রাজনৈতিক সংকট। চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিবাদ ও রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলার কাজ শুরু হয়েছে। রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ঐতিহাসিক দায়িত্ব ছাত্র-জনতা নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছে।

তারা বলেন, রাষ্ট্রপতি চুপ্পুকে অবলম্বন করে মুজিববাদি ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার পাঁয়তারা করছে এবং দেশে নতুন করে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির দূরভিসন্ধি হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে রক্ষা করতে এবং ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থার বিলোপ সাধনে বাংলাদেশের জনগণ, ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই লক্ষ্যে বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধান এবং সেই সংবিধানের রাষ্ট্রপতি চুপ্পুকে অপসারণ করতে ছাত্র-জনতা ও সকল রাজনৈতিক দলকে রাজপথে সরব ও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটি মনে করে- বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধান মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পক্ষ ও ব্যক্তির অবদানকে অস্বীকার করে এবং একক ব্যক্তি ও দলের হাতে মুক্তিযুদ্ধের একচ্ছত্র মালিকানা তুলে দেয়। রাষ্ট্রের জনগণকে জুলুম ও শোষণের একচেটিয়া ক্ষমতা মুজিববাদী বাকশালী ও ফ্যাসিবাদি আওয়ামী লীগের হাতে অর্পণ করে এই সংবিধান। উপরন্তু, এই সংবিধানই গত ১৫ বছরে বাকশালী ও ফ্যাসিবাদি আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদ কায়েম ও ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধান ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে। এই সংবিধানকে ‘লাইফ সাপোর্ট’ দিয়ে জোর করে টিকিয়ে রাখার মাধ্যমে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি স্পষ্টভাবে বলে দিতে চায়- জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় ইতোমধ্যেই দেয়ালে দেয়ালে ব্যক্ত হয়েছে। জনগণই এই ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে লিখিত সংবিধানে রূপ দেবে। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায় ও বহু বছরের মুক্তি সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে এবং ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে জুলাইয়ের ছাত্র-শ্রমিক-সৈনিক-জনতার আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারে অভ্যুত্থানের এমন ঘোষণাপত্র (Proclamation of Republic) অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রদান করতে হবে। ’৭২-এর মুজিববাদী সংবিধান বাতিল এবং রাষ্ট্রপতি চুপ্পুর অপসারণসহ ছাত্র-জনতার ৫ দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি বাংলাদেশের জনতাকে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করবে।





Source link

Shares:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।