রাজনীতি

দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে : ফারুক

দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে : ফারুক


দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাস্তায় ছিল বিএনপি, ছাত্ররা এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা। যার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

রোববার (২৭ অক্টোবর) সকালে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ এলডিপির প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, এখন আবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ঘোলাটে করার জন্য একটা প্রগতিশীল চক্র চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার ইঙ্গিত বহন করে বঙ্গভবনের সামনে হওয়া মিছিল। নতুন করে আরেকটা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করার চক্রান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অস্থিতিশীল করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ১২ দলীয় জোটসহ সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের ওপর অনেক নির্যাতন ও নিপীড়ন করেছে। চৌধুরী আলম-ইলিয়াস আলীসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম-খুন করেছে। নির্যাতনের জন্য আয়নাঘর তৈরি করেছে। হারুন- বিপ্লবদের মতো লোক তৈরি করে বহু মায়ের বুক খালি করেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে শেখ হাসিনা। ষড়যন্ত্র করে সংবিধান পরিবর্তন যদি না হতো, তাহলে সংসদীয় রাজনীতির মাধ্যমে এই দেশ পরিচালিত হতো। কিন্তু সেই সংসদীয় রাজনীতিকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আড়াই মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। এখনো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক মামলা প্রতাহ্যার হলো না। মন্ত্রণালয়ের যারা দায়িত্বে আছেন তারা এখনো শ্বেতপত্র প্রকাশ করেনি। কোন মন্ত্রণালয় কত হাজার কোটি টাকা লুট করেছে, তাও প্রকাশ করা হচ্ছে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির এ নেতা বলেন, আপনার প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে, এটা টিকিয়ে রাখতে হলে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশে নির্বাচনের তারিখ অবিলম্বে আপনি ঘোষণা করেন। তাহলে আমরা বুঝতে পারব, দেশ কোনো দিকে যাচ্ছে। যারা রাজনীতি করে তারাই দেশ পরিচালনা করবে। আমরা আশা করব, অবিলম্বে শেখ হাসিনার জঞ্জাল মুক্ত করবেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে আজ আমরা মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। এই ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট অনেকেই নিজের করে নিতে চাচ্ছে। গণঅভ্যুত্থান একদিনে তৈরি হয়নি। ১৫-১৬ বছর আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। জেল-জুলুম, গুম-খুনের শিকার হয়েছি। সর্বশেষ মানুষ রাজপথে নেমে পৃথিবীর সেরা একজন স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে।

ফারুক বলেন, শেখ হাসিনার বর্বরতা, নির্মমতা দেশের মানুষের মধ্যে তার জন্য ঘৃণা সৃষ্টি করেছে। এই কারণে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কোনো চিহ্নও থাকবে না। অনেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চায়, আগামীতে বাংলাদেশে নৌকা প্রতীক থাকবে না। প্রয়োজনে আবারও রাজপথে রক্ত দেব, তবুও স্বৈরাচার ও তাদের দোসরকে এ দেশে আর কোনো দিন পুনর্বাসন করতে দেওয়া হবে না।

এ সময় বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে যখন যুগপৎ আন্দোলন ঘোষণা করা হয়, তখন আমরা ১২ দলীয় জোট প্রতিটা মুহূর্তে রাজপথে ছিলাম। ৭ জানুয়ারির পর মানুষ হতাশায় থাকলেও আমরা আন্দোলন জোরালো করতে সারা দেশে কর্মসূচি পালন করেছি। ভারতের কারণে শেখ হাসিনা টিকে ছিলেন। এজন্য আমরা ভারতবিরোধী কর্মসূচি দিয়েছি। ভারতীয় পণ্য বর্জণের জন্য সারাদেশে গিয়েছি। আমরা বলেছি, বাংলাদেশে ভারতের সবচেয়ে বড় পণ্য হচ্ছে শেখ হাসিনা। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।

তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর আমরা রক্তাক্ত আন্দোলন করেছি। ছাত্র, জনতা, শ্রমিক, কৃষক, গার্মেন্ট শ্রমিকরা আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটিয়েছে। সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছে আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে আমরা অত্যন্ত সাদরে গ্রহণ করেছি। তিনি যাদের উপদেষ্টা করেছেন, তারা আন্দোলনের সময় বিদেশে ছিলেন। গণঅভ্যুত্থানের পর শপথ নিয়েছেন। তারা এখনো বুঝতে পারছেন না যে, কী করবেন।

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ ও আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান বলেন, নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করে আজকে অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন তারা ক্ষমতায় যাবেন। সে স্বপ্ন আমরা বাস্তবে রূপান্তরিত হতে দিব না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সেলিম বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যতদিন রাষ্ট্র থাকবে, ততদিন এই সংস্কার চলবে। আপনারা সংস্কারের নামে বেশি সময় নিবেন না। আমরা চাই, দ্রুত সময়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। অন্যত্থায় আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।

সৈয়দ ইব্রাহিম রওনকের সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভায় আরও বক্তব্য দেন- ১২ দলীয় জোট শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন, বাংলাদেশ এলডিপির নেতা এমএ বাসার, সাকি এনামুল হক, মাহউদ্দিন আহাম্মদ, বাংলাদেশ এলডিপি যুবদলের আহ্বায়ক এসএম ফয়সাল, মহিলা দলের আহ্বায়ক নিলা শেখ প্রমুখ।





Source link

Shares:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।