গেল বছর ৭ অক্টোরের মাত্র এক সপ্তাহ আগে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছিলেন, ‘গত দুই দশকের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্য আজ অনেকটাই শান্ত।’ কিন্তু তারপর থেকে অঞ্চলটিতে এক বছর ধরে সবচেয়ে ভয়াবহ সংকট চলছে। গাজা থেকে শুরু হয়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে লেবাননেও। এতে যোগ দিয়েছে ইরাক, ইয়েমেন ও সিরিয়ার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী।
একের পর এক শান্তি প্রক্রিয়া ব্যর্থ হচ্ছে। একদিকে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশগুলো তাদের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে তুলেছে অন্যদিকে পশ্চিমা অস্ত্রের সরবরাহও সমানতালে ইসরায়েলকে শক্তিশালী করছে। এমন পরিস্থিতিতে সবার প্রশ্ন মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাত শেষ হবে কীভাবে?
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের সাতই অক্টোবরের আগে গাজার বাসিন্দাদের জীবন কেমন ছিল, তা মানুষ প্রায় ভুলতে বসেছে। কারণ গণমাধ্যম ক্রমাগত মধ্যপ্রাচ্যে একটি ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ আশঙ্কার কথা বলছে। এই সংকট মোকাবিলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিলার সাম্প্রতিক সময়ের ইসরায়েল সফর দেখে মনে হয়, কূটনৈতিক উপায় খোঁজার চেয়ে ব্যবস্থাপনার দিকে যুক্তরাষ্ট্র বেশি মনোযোগী।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র এ সপ্তাহ বাকি এবং এখন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বিষাক্ত অবস্থায় আছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সাহসী ও নতুন উদ্যোগ নিবে বলে মনে হয় না। আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ হলো, বিস্তৃত আঞ্চলিক সংঘাত প্রতিরোধ করা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানের শাসকরা ইসরায়েলবিহীন একটি বিশ্বের স্বপ্ন দেখতেই পারে, কিন্তু তারাও জানে, এই অঞ্চলের একমাত্র পরাশক্তিকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ইরান খুবই দুর্বল। বিশেষ করে, এমন এক সময়ে যখন ইরান সমর্থিত হামাস ও হিজবুল্লাহকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা করছে ইসরায়েল। একইভাবে, ইরানের দেওয়া হুমকি থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্তি পেতে চায় ইসরায়েল। কিন্তু ইসরায়েল জানে, সম্প্রতি তারা বিভিন্ন অভিযানে সফল হলেও একা এ কাজ করতে পারবে না।
ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান বিরোধ সমাধান নিয়ে আলোচনাও বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো একদিন যদি ইসরায়েলের মনে হয়, তারা হামাস ও হিজবুল্লাহর যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করেছে বা যখন মার্কিন নির্বাচন শেষ হবে, তখন হয়তো সংকট সমাধানের সুযোগ আসবে। কিন্তু এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, সংকট সমাধানের পথ আরও অনেক দূরে।