বিশ্ব

পুড়েছে বাস্তুচ্যুত ৪ লাখ শিশুর স্বপ্ন

পুড়েছে বাস্তুচ্যুত ৪ লাখ শিশুর স্বপ্ন


লেবাননে চলমান সংঘাতের আঁধারে, একটি ছোট শহরে, শান্তি ও খুশির স্মৃতি ভুলতে বসেছে চার বছরের কিশোরী লায়লা। তার চোখে-মুখে কিছু দিন আগেও যে হাসির রেখা ছিল, সেই হাসি এখন মুছে গেছে।ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ফলে, লায়লা ও তার পরিবার তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

তিন সপ্তাহ ধরে লেবাননে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময়ের মধ্যে প্রায় চার লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে একটি প্রজন্ম ঝড়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

এদিকে লায়লা এখন একটি স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে, যেখানে সে আগে স্কুলে যেতে পারত। কিন্তু এখন স্কুলের স্থান বদলে গেছে, যুদ্ধের তীব্রতা তাদের শিক্ষা এবং ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করেছে।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, লাখ লাখ শিশু বর্তমানে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। লায়লা, তার ছোট ভাই সাফি এবং মা-বাবা, সবাই এ আশ্রয়কেন্দ্রে এসে একে অপরকে সান্ত্বনা দেয়। তবে, তাদের মনে ভয় এবং উদ্বেগ রয়েছে। মা, আমরা কি আবার স্কুলে যেতে পারবে? -প্রতিদিনই লায়লা এ প্রশ্ন করে। কিন্তু তার মায়ের মুখে কোনো উত্তর নেই।


ইউনিসেফের মানবিক কার্যক্রমের উপনির্বাহী পরিচালক টেড চাইবান আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে বলেছেন, এ যুদ্ধের বয়স মাত্র তিন সপ্তাহ, কিন্তু অনেক শিশু ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যেই অসংখ্য শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্কুলগুলো যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে শিশুরা এখন স্কুলেও যেতে পারছে না।

এদিকে লেবাননে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০০ বার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। লেবাননের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক হামলার খবর সামনে আসছে। সেখানে লায়লার মতো হাজারো শিশু, যারা শুধু আনন্দ ও খেলার জন্য জন্মগ্রহণ করেছিল, তারা এখন ভবিষ্যতের অন্ধকারে।


একদিন, লায়লা এবং তার ভাই সাফি স্কুলের মাঠে এক সঙ্গে খেলা করার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু এখন সেই মাঠ আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সেখানকার শিশুরা নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য একে অপরকে আঁকড়ে ধরে। আমরা আবার একসঙ্গে খেলব, মা!-লায়লা প্রায়ই সাফির কাছে এ আশা জাগায়।

শিশুদের জন্য এই কঠিন সময়ে, লায়লার মতো অনেকেই এ অবস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। তারা একে অপরের সাহসে শক্তি খুঁজে পায়। লায়লার মা সবসময় বলেন, আমরা এ পরিস্থিতিতে একসঙ্গে আছি। একদিন আবার আমাদের জীবন ফিরবে।


লেবাননের এই দুঃসময়ে লায়লা ও তার বন্ধুদের স্বপ্নগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের শক্তি ও সাহস, সামনের দিনগুলোতে নতুন কিছু গড়ার আশা দেয়। মানবিক সম্পর্কের এ দৃঢ়তা যুদ্ধের মাঝে তাদের জন্য নতুন আলো দেখাতে পারে।

উল্লেখ্য, ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে নিরাপত্তার নামে লেবাননজুড়ে বিশাল বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এ হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১ হাজার ৪৮৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও ৪ হাজার ২৯৭ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।


এখন পর্যন্ত লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল পূর্ব বেকা উপত্যকা, বৈরুতের শহরতলি এবং দক্ষিণাঞ্চল। এদিকে ইসরায়েলের হামলার জবাবে হিজবুল্লাহও পাল্টা হামলা করেছে।

লেবাননে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থলপথে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। তার মধ্যেই দক্ষিণ লেবাননের ২৫টি শহর খালি করার নির্দেশ দিয়েছে দখলদার দেশটি। এসব শহরের বাসিন্দাদের অবিলম্বে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে উত্তর দিকে চলে যেতে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।





Source link

Shares:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।