গাজার উত্তরাঞ্চলের বেত লাহিয়ায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের এ হামলায় নিহতে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রোববার (২০ অক্টোবর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলের এ হামলায় আরও অনেকে পাথরের নিচে চাপা পড়ে আছেন। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে নারী এবং শিশুরাও রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলার ফলে একের পর এক এলাকা কেঁপে উঠেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েক ডজন লোক ইসরায়েলের এ হামলায় আহত হয়েছেন। অনেকে এখনও পাথরের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এ হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪২ হাজার ৫১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া তাদের হামলায় এক লাখের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস। দেশটির এ হামলার জবাবে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে এ যুদ্ধ শুরু হয়। ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ নেয় যুদ্ধ।এরপর থেকে গাজার ওপর বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এমনকি তাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি হাসপাতাল,স্কুল, শরণার্থী শিবির , মসজিদসহ ধর্মীয় স্থাপনাও।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে
গাজাভিত্তিক জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা গত সপ্তাহে গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, তা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে… দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ভবনও নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই এ অঞ্চলের ভৌগোলিক চিত্র পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যেখানে আগে পাহাড় ছিল না, এখন সেখানে পাহাড় হয়ে গেছে। দুই হাজার পাউন্ডের বোমাগুলো আক্ষরিক অর্থেই এ অঞ্চলের মানচিত্র বদলে দিয়েছে।’