বিশ্ব

আবারও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা, ইসরায়েলের মিত্রদেরও ক্ষোভ

আবারও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা, ইসরায়েলের মিত্রদেরও ক্ষোভ


লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর আবারও হামলা হয়েছে। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) ইসরায়েলি বাহিনী তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে দুই শ্রীলঙ্কান সেনা আহত হন। সতর্ক করার পারও ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে চারটি হামলায় ইসরায়েলের মিত্র দেশগুলোও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এসব হামলার ঘটনা স্বীকার করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এর জন্য পুরো বাহিনী দায়ী নয়। হামলাকারী সেনাদেরই এর দায় নিতে হবে। তারা কেন এ কাণ্ড ঘটিয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।

এর আগে লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের তিনটি অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা হয়। ইসরায়েলি বাহিনী এ হামলা করেছে বলে দাবি জাতিসংঘের বাহিনীর। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) পৃথক দুুটি অবস্থানে হামলা হয়। অপর হামলটি করা হয় বুধবার (৯ অক্টোবর)।

শান্তিরক্ষী বাহিনী আরও বলেছে, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় ইসরায়েলি ট্যাংক নাকোরায় বাহিনীর প্রধান সদর দপ্তরের একটি ওয়াচটাওয়ারে গুলি ও গোলা নিক্ষেপ করে। এতে টাওয়ারটি ভেঙে পড়ে। সেখানে তাদের দুজন ইন্দোনেশীয় শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। অন্য দুটি ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। শান্তিরক্ষীদের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে যে কোনো আক্রমণ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। আর এটিই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী করল।

এদিকে ইসরায়েলের এমন কাজ সমর্থন করছে না তার মিত্ররাও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, লেবাননে হিজবুল্লাহর সাথে সংঘর্ষের সময় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করার জন্য তিনি ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছেন। এ ধরনের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

আইরিশ প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেছেন, ইউনিফিল সৈন্য বা অবকাঠামোর আশপাশে যে কোনো গুলিবর্ষণ বেপরোয়া কাজ এবং এগুলো অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সৈন্য পাঠানোর কাজে অন্যতম প্রধান অবদানকারী দেশ ইতালি বলেছে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে।

এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যদি আমরা সত্যিই শান্তি এবং স্থিতিশীলতা চাই, সেক্ষেত্রে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ হলো এর প্রাথমিক পদক্ষেপ। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত হরি প্রাবোয়ো বলেছেন, এ ঘটনা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, কীভাবে ইসরায়েল নিজেদের আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে, দায়মুক্তির ঊর্ধ্বে এবং আমাদের শান্তির যৌথ মূল্যবোধের ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে। তেমনি শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলার ঘটনা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

লেবাননে নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম ফোর্স ইন লেবানন (ইউনিফিল) এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের কার্যালয় ও সংলগ্ন এলাকায় বারবার আঘাত হানা হয়েছে। তারা বলেছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী পার্শ্ববর্তী একটি বাঙ্কারেও গুলি চালিয়েছে যেখানে শান্তিরক্ষীরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ গোলাবর্ষণের ফলে একাধিক গাড়ি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে দুর্ঘটনাবশত হামলার কোনো কারণ দেখছেন না। ওয়াচটাওয়ারে হামলার বিবরণ দিয়ে তারা বলেছে, ইচ্ছাকৃত সুনির্দিষ্ট অবস্থান লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এতে ক্যামেরাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ধ্বংস সে বার্তা দেয়।

ইসরায়েল ১৯৭৮ সালে আক্রমণের পর লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলি সৈন্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে কি না, তা তদারকি করতে ইউনিফিল গঠন করা হয়েছিল। ইউনিফিলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১০ হাজারের বেশি শান্তিরক্ষী রয়েছেন। ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর জাতিসংঘ তাদের মিশন সম্প্রসারিত করে এবং সীমান্ত বরাবর তৈরি করা ‘বাফার জোনে’ টহলদারি করতে শান্তিরক্ষীদের অনুমতি দেওয়া হয়।





Source link

Shares:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।