ব্যবসা

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরেক দফা বাড়ছে নীতি সুদহার

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরেক দফা বাড়ছে নীতি সুদহার


ফের বড় ব্যবধানে নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে ওভারনাইট রেপো সুদহার ১০ শতাংশে উন্নীত হবে এবং ঋণসহ সব ধরনের ব্যাংকিং পণ্যের সুদের হার বেড়ে যাবে। যা আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে কার্যকর হবে।

গত বছরের মার্চ থেকে দেশের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর নীতি সুদহার ৯ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে সাড়ে ৯ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্বে আসার পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাড়ানো হলো। এর আগে প্রথমে সাড়ে ৮ থেকে বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করা হয়েছিল।

নতুন নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুসৃত সংকোচনমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ওভারনাইট রেপোনীতি সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হলো।

এ ছাড়া ব্যাংকসমূহের তারল্য ব্যবস্থাপনা অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে পরিচালন করার লক্ষ্যে নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুদহার শতকরা ১১ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। আর নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) শতকরা ৮ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এ সিদ্ধান্ত ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।

বিবিএসের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়ানোর পর চলতি বছরের জুলাইয়ে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়। এটি ২০১০-১১ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ। বিগত সরকার গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। যদিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যস্ফীতি ছিল দেশে।

অন্যদিকে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের মে থেকে বেশ কয়েকবার সংকোচনমূলক নীতি অনুসরণ করছে। বাড়ানো হচ্ছে পলিসি রেট। নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়েছে। এতে ঋণ নেওয়া আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে।

আগস্ট ও সেপ্টেম্বরেও নীতি সুদহার বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরতে গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দুবার নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। ফলে ওভারনাইট রেপো সুদহার ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে উন্নীত হয় এবং ঋণসহ সব ধরনের ব্যাংকিং পণ্যের ওপর সুদের হার বেড়ে যায়। মুদ্রানীতিতে সংকোচনমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নীতি সুদহার বাড়ানো হয় বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট নীতি সুদহার বাড়ানো হয়। তখনো ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে নীতি সুদহার ৯ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছিল।

নীতি সুদহার বাড়ানোর মূল উদ্দেশ্য হলো বাজারে অর্থের সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে বাজারে অর্থের সরবরাহ বেশি এবং সে কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, তাহলে অর্থপ্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হয়। নীতি সুদহার বৃদ্ধির অর্থ হলো, ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত সুদ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ করতে হবে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে ঋণ দেয়, তার সুদহারও বাড়ে। নীতি সুদহার বেশি হলে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে নিরুৎসাহিত হয়।





Source link

Shares:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।