ব্যবসা

একীভূত হতে চায় না এক্সিম-পদ্মা ব্যাংক

একীভূত হতে চায় না এক্সিম-পদ্মা ব্যাংক


দেশের আর্থিক খাতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে কয়েকটি বেসরকারি খাতের ব্যাংক। এসব ব্যাংককে টেনে তুলতে কাজ করছে নতুন সরকার। তবে যেসব ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না সেগুলো একীভূত করা হতে পারে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে আগের সরকারের আমলে একীভূত হতে চলা এক্সিম ও পদ্মা কেউই আর একীভূত হতে চাচ্ছে না।

বিশেষ করে, বিভিন্ন কারণে তারল্য সংকটে পড়া এক্সিম ব্যাংক এখন পদ্মা ব্যাংকের দায় নিজেদের ঘাড়ে নিতে নারাজ। আবার পদ্মা ব্যাংকও বলছে, একীভূত নয় ঘুরে দাঁড়াতে চায় তারা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক দুটির একীভূত হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।

অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও ঋণ জালিয়াতির কারণে দুর্বল হয়ে রেড জোনে চলে আসা পদ্মা ব্যাংককে শরিয়াহ ভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংকের মধ্যে চুক্তিও সম্পাদিত হয়েছিল। মূলত এটা হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। এক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। সরকার পরিবর্তনের পর দুটি ব্যাংকই এখন আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে চাচ্ছে।

তথ্য বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর ভিত্তিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চলতি বছরের শুরুতেই কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করার কার্যক্রম শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার প্রথম বলি ছিল এক্সিম ও পদ্মা। এই ক্ষেত্রে ব্যাংক দুটির মধ্যে চুক্তিও সম্পাদন করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এ ছাড়া আরও কয়েকটি ব্যাংককে এই ধারায় নিয়ে আসতে চাইলেও তাতে সফলতা আসেনি। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকার পতন হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সে পিসিএ ফ্রেমওয়ার্কও অকার্যকর হয়ে পড়ে।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে ওই সময় চুক্তি স্বাক্ষর করলেও পদ্মা ব্যাংক এখন আর এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে যেতে চাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নিয়ে তারা এখন নিজেরাই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কাজি মো. তালহা বলেন, আমরাও এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একত্রিত হতে চাই না। আমার বিশ্বাস, একটু সহায়তা পেলে নিজেরাই ঘুরে দাঁড়াতে পারব। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু তারল্য সহযোগিতা প্রয়োজন। তাহলে পদ্মা ব্যাংক আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আমাদের ব্যাংক অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মার্জ হওয়ার সিদ্ধান্ত আসার পর গ্রাহকরা আবারও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এখন আমরা চাই নিজেরাই নিজেদের মতো ঘুরে দাঁড়াতে।

অপরদিকে, পদ্মা ব্যাংককে সঙ্গে নিতে চাচ্ছে না এক্সিম ব্যাংকও। এটার সঙ্গে পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করা হবে না বলেও জানিয়েছেন ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম স্বপন। গত সোমবার গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমাদের পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। মানুষ এক্সিম ব্যাংকে প্রচুর আমানত রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও আমরা তারল্য সহায়তা চেয়েছি। ইতোমধ্যে এক হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা পেয়েছি। সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ কোটি টাকা তারল্য সহয়তা পাওয়া গেলে আরও সুবিধা হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে এক্সিম ব্যাংককে নতুন করে আবার কোনো সহায়তা দেওয়া হবে কি না সেটা নিয়ে ভাববে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক দুটি একীভূত হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আমাদের ব্যাংকিং টাস্কফোর্স। তারা ব্যাংকগুলোকে নিরীক্ষা করে দেখবে এবং কোন সমস্যার কী সমাধান তার সুপারিশ করবেন। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পরই আত্মগোপনে চলে যায় এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি সবমহলেই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর তার নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসে। এসব কারণে গত ১ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করে প্রশাসন। আর তার আমলে অনিয়মের কারণে তারল্য সংকটে পড়েছে এক্সিম ব্যাংকও। ইতোমধ্যে ব্যাংকটিকে ১ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকটির সংকট কাটেনি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন এক্সিম ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। তারা ব্যাংকের নানা সমস্যা তুলে ধরেন গভর্নরের কাছে। চান তারল্য সহায়তাও। যদিও এই সহায়তা দিতে একমত নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।





Source link

Shares:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।