সারাদেশ

সাতক্ষীরায় ‘ভুল’ চিকিৎসায় দুই প্রসূতির মৃত্যু

সাতক্ষীরায় ‘ভুল’ চিকিৎসায় দুই প্রসূতির মৃত্যু


সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ‘ভুল’ চিকিৎসায় একদিনে দুই প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে তালা উপজেলার পাটকেল ঘাটায় সরকারি খাদ্যগুদাম সড়কের পাশে লোকনাথ নার্সিংহোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।

মৃতরা হলেন, উপজেলার খলিশখালী ইউনিয়নের ওবাইতলা বাহদুরপুর গ্রামের ফয়সাল মোড়লের স্ত্রী তাসমিনা খাতুন (১৯) ও খলিশখালী ইউনিয়নের লাভবকাটি গ্রামের আইন্দীর মেয়ে আম্বিয়া খাতুন (৩৫)।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই সিজার (অস্ত্রোপচার) করায় ওই দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ওই ক্লিনিকে প্রায়ই রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

তাসমিনা খাতুনের স্বামী ফয়সাল মোড়ল বলেন, দুপুরে তার স্ত্রীকে ক্লিনিতে ভর্তি করা হয়। পরে রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে সাতক্ষীরার হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন মারা যায়।

আম্বিয়া খাতুনের স্বামী আব্দুল ছালাম বলেন, আমার স্ত্রীর প্রসববেদনা উঠলে শুক্রবার সকালে পাটকেলঘাটার লোকনাথ ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সিজার করা হয়। রাত ১০টার দিকে স্ত্রীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাতক্ষীরা হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়া স্ত্রীর দাফনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, গত শুক্রবার রাতে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে দুটি নবজাতক শিশুর জন্য ৯ লাখ টাকার চেক দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা নগদ স্বজনদের কাছে তুলে দেন লোকনাথ নার্সিংহোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক পুলক কুমার পাল। তবে এ বিষয়ে রাতে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই ডায়াগনস্টিক সেন্টার ত্যাগ করেন মালিক পুলক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ক্লিনিকের সাবেক এক কর্মচারী জানান, পুলক পাল বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখিয়ে কম টাকায় চিকিৎসা করাবে বলে রোগী ভর্তি করেন। পরে অপচিকিৎসার নামে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার টাকা। এ ছাড়া অধিকাংশ সিজার করেন ওই ক্লিনিকে কিংকর নামে এক কর্মকর্তা। পরে অবনতি ঘটলে পাঠানো হয় শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে। ইতোমধ্য ডজন খানেক মানুষের প্রাণহানির অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে লোকনাথ নাসিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক পুলক পাল বলেন, বিষয়টি নিয়ে পরে কথা হবে। পরবর্তী সময়ে একাধিকবার ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।

ক্লিনিকে এক কর্মচারী জানান, ডা. শাহরিয়ার কবির ইমন এবং বরকত সিজার করেছেন। পরে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাদের আত্মীয়দের জানিয়ে হার্ট ফাউন্ডেশনে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন মৃত্যু হয় তাদের।

হার্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ডা. ফয়সাল আহমেদ বলেন, লোকনাথ নার্সিংহোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে অপারেশন করে বিকেল ৩টার দিকে আমার এখানে রোগীগুলো নিয়ে আসা হয়। ততক্ষণে একটি রোগী মারা গেছে। আরেকজন অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে আইসিউতে রাখা হয়েছিল। রোগীদের বাঁচানোর মতো অবস্থা ছিল না।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মো. রাসেল বলেন, এ ব্যাপারে খবর নিয়েছি, ওসি ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুস সালাম বলেন, ঘটনাটি আমিও শুনেছি। ইতোমধ্যে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও ইউএনওকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আমাদের ভ্যাকসিন নিয়ে একটা প্রোগ্রাম রয়েছে, প্রোগ্রামগুলো শেষ হলেই আমরা বিভিন্ন ক্লিনিক পরিদর্শনে বের হব।





Source link

Shares:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।