নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদক কারবারি ও ভূমিদস্যুতার প্রতিবাদ করায় এলাকাবাসীর ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে দাউদপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব মিয়া ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। এতে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওই নেতার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে বলে জানা গেছে।
পূর্ববিরোধের জেরে এ ঘটনার জন্য জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সুলতান মাহমুদ ও তার অনুসারীদের দায়ী করা হচ্ছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন সুলতান মাহমুদ। মূলত দীর্ঘদিনের মাদক ব্যবসা ও ভূমিদস্যুতার সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে মোতালেব বাহিনী এ ধরনের অভিযোগ করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) রূপগঞ্জের দাউদপুর বীর হাটাবো এলাকায় মোতালেব মিয়ার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুরসহ তার লোকজনদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। চাঁদা না পেয়ে সুলতান মাহমুদ ও তার অনুসারীরা এ হামলা করে বলে মোতালেব মিয়া অভিযোগ করেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে রূপগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সুলতান।
তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোতালেব মাদক কারবার করেন। তিনি অনেক মানুষকে মিথ্যা মামলা ও হামলা করে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন সময় জমি দখল করে আসছেন। মূলত মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ার কারণে মোতালেব, তার ভাইসহ ১০-১২ জন মিলে গ্রামবাসীর ওপর হামলা করে। এ সময় ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি নাঈমের ওপর হামলা করা হয়। এতে তার একজন কর্মী জখম হয়েছেন। পরে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে মোতালেব বাহিনীকে প্রতিহত করে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনার জন্য তারা আমাকে দায়ী করছে। অথচ আমি এর সঙ্গে জড়িত নই।
তিনি আরও বলেন, মোতালেব দুই বছর আগেও অটোরিকশা চালক ছিলেন। অথচ এখন তার আলিশান ৪টি বাড়ি ও দুটি গাড়ি রয়েছে। আলাদিনের চেরাগ ঘষা দিয়ে তিনি দুই বছরে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। গড়ে তুলেছে মাদক ও ভূমিদস্যুতার বিশাল সাম্রাজ্য। তার বড় ভাই মোগল ও ছোট ভাই হুমায়ুন মাদকের কারবারির সঙ্গে জড়িত। তিনি সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মাস্টারের ডান হাত ছিলেন। সে কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। তবে আমি তার মাদক ব্যবসা ও অপকর্মের বিরুদ্ধে বিগত সময়ে প্রতিবাদ করেছি। এ কারণে তিনি আমার বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করছেন।
মোতালেবের বিরুদ্ধে মাদক ও ভূমিদস্যুতার অভিযোগ তুলে স্থানীয় বাসিন্দা আক্তার হোসেন ভুট্টো বলেন, গত রমজানে মোতালেব, তার ভাই হুমায়ুন ও মোগল আমাকে ও আমার ভাইকে মারধর করেছে। তারা আমাদের জমি দখল করে নিতে এ কাজ করেছে। তার সব ভাই মাদক সেবন করে ও অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দেয়। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করে। এ কারণে এলাকাবাসী মিলে তাকে প্রতিহত করতে গেলে উল্টো আমাদের ওপর হামলার অভিযোগ করেছে।
রুবেল নামে আরেকজন অভিযোগ করেন, তার ২২ শতাংশ জমি মোতালেব ও তার লোকজন দখল করে রেখেছে। বাড়ির ভেতরের সব গাছ তারা কেটে ফেলেছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হুমকি দেয়।
রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, এ ঘটনায় মোতালেব লিখিত অভিযোগ করেছেন। বৃহস্পতিবার প্রতিপক্ষ সুলতান হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মোতালেব ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও ভূমিদস্যুতার বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, তারা এসবের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তবে মোতালেবের বিরুদ্ধে মাদক মামলার বিষয়টি এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। এটা জেনে বলা সম্ভব হবে।