বাবা-মাকে দেওয়া কথা রাখতে পারলেন না ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কবিরপুরে বাসিন্দা মানিক সাহার ছেলে নৌ ক্যাডেট সৌরভ কুমার সাহা। কথা রাখার আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। জাহাজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেল সৌরভের পরিবারের স্বপ্ন। মাত্র দুই মাস আগে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে জাহাজে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন সৌরভ।
বাবা-মাকে সংসারে সুদিন ফিরিয়ে আনবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এমনকি পূজোর ছুটিতে বাড়ি আসবেন সেই কথাও দিয়েছিলেন। দুচোখ ভরে বাবা-মাকে দেখবেন, জড়িয়ে ধরে দুঃখ ঘোচাবেন। তবে সেই আশা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে আগুনে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ডলফিন জেটিতে ‘বাংলার জ্যোতি’ নামে একটি তেলবাহী জাহাজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা যান সৌরভ। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর সৌরভের মৃত্যুর খবর পৌঁছায় বাড়িতে। তারপর থেকেই পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সৌরভের বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের যারাই সান্ত্বনা দিতে এসেছেন তাদের চোখেও ছিল জল।
সৌরভের প্রতিবেশী নিপুণ বিশ্বাস বলেন, সৌরভদের পরিবার নিম্নবিত্ত। সৌরভের বাবা মানিক সাহা ছোট্ট একটা মুদি দোকান চালান। ছোটবেলা থেকেই সে অত্যন্ত মেধাবী ছিল। তার বাবা খুব কষ্ট করে তাকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার পড়িয়েছিলেন। সৌরভ বরিশাল মেরিন একাডেমি থেকে পাস করে আগস্টে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে যোগ দিয়েছিলেন। তার চাকরির বয়স মাত্র দুই মাস। পরিবারটির সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।
সৌরভের মা সীমা সাহা বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে রোববার দুপুরে শেষ কথা হয়। সে বলেছিল কুতুবদিয়া থেকে তেল নিয়ে রওনা হয়েছে। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে। আমি বলেছিলাম একটু ভিডিও কল দিতে। কিন্তু জাহাজের ডেকে অনেক কষ্ট, সেটা দেখে আমরা কষ্ট পাব ভেবে আমাদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলত না।
দাদা শচীন সাহা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, সে বলেছিল পূজোর ছুটিতে বাড়িতে আসবে। কিন্তু তার আসা আর হলো না। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।
দাদি মিনতি সাহা বলেন, আমার নাতি সৌরভ বাড়ি থকে জাহাজে যাওয়ার আগে সমস্ত ঘরে রঙ দিয়ে যায়। আর যাওয়ার সময় বলেছিল- ‘এটাই আমার শেষ যাওয়া।’