ঢাকার ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি ভবনের একটি কক্ষ ‘রায়ান এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ প্রতিষ্ঠানের প্রোপ্রাইটর গাংগুটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের মোল্লার শালীর ছেলে শাকিল শিকদার নামে এক ব্যক্তির।
সরকারি নথি অনুযায়ী, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের ৮টি কক্ষ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।
ভবনের কক্ষ বরাদ্দসংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া প্রাধিকারভুক্ত অফিস ছাড়া অন্যকোনো প্রতিষ্ঠানকে কক্ষ বরাদ্দ না দিতে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হলো।
তবে গেল প্রায় দেড় বছর ধরে গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায় ইউপি ভবনের দ্বিতীয় তলায় আনসার ভিডিপির জন্য বরাদ্দ করা কক্ষটি ব্যক্তিগত কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদে দুই তলা ভবন রয়েছে। এটির দ্বিতীয় তলায় পশ্চিম দিকের শেষ কক্ষটি আগে ব্যবহৃত হতো ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র হিসেবে। পরের কক্ষটি ছিল আনসার ভিডিপির জন্য। তবে বর্তমানে কক্ষটি ‘রায়ান এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কক্ষের ভেতরে ঢুকে একটি নেমপ্লেট দেখা যায়।
এতে প্রোপ্রাইটর হিসেবে লেখা রয়েছে, শাকিল আহমদ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাকিল আহমেদ গাংগুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের মোল্লার শালীর ছেলে।
ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের কক্ষে শালীর ছেলের অফিস করার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও গাংগুটিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্যরা।
গাংগুটিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইমান আলী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউপি ভবনের একটি কক্ষ তার শালীর ছেলেকে অফিস হিসেবে দিয়েছিলেন। আমরা জানতাম না। জানলেও কিছু বলতে পারিনি। সে একাই দলীয় ক্ষমতায় এসব করত। আমাদের ভয়ভীতি দেখাত। সরকারি ভবন কোনো ব্যক্তিগত কাজের জন্য কাউকে দেওয়া যায় না। তবুও চেয়ারম্যান দিয়েছে। এখন প্রশাসক দেওয়া হয়েছে, আমরা চাই, এটি অপসারণ করা হোক।
গাংগুটিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোখলেছুর রহমান বলেন, আমাদের গাংগুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পরিষদের একটা কক্ষে চেয়ারম্যান তার শালীর ছেলেকে ব্যবসায়িক অফিস করে দিয়েছিল। সেখানে ডেকোরেশন করে সে কাজ করত। এখন নতুন প্রশাসনকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে আব্দুল কাদের মোল্লার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার বাড়িতেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের সম্প্রতি হত্যা মামলায় আসামি করা হয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের মোল্লাকে। এরপর থেকেই পলাতক তিনি। ইউনিয়ন পরিষদের আশপাশে সম্প্রতি আসেননি শাকিল শিকদারও।
এ বিষয়ে শাকিল শিকদার বলেন, রায়ান এন্টারপ্রাইজ আমার প্রতিষ্ঠান। তখন করা হয়েছিল। তবে এখন কোনো কার্যক্রম চালু নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতো। যখন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ হয়, গত বছর তখন ওটার কার্যক্রম চালানোর জন্য নেওয়া হয়েছিল, চেয়ারম্যানই চালিয়েছে। আমি সাইনবোর্ড লাগাইছি সেখানে, রুম নেওয়ার দরকার ছিল লোনের জন্য, তখন সাইনবোর্ড লাগাইছি। চেয়ারম্যানই করেছে। আমি কখনো বসিনি। কার্যক্রমও ছিল না। কোনো কিছু না। সাইনবোর্ড ছিল শুধু। ফরেন প্লেয়ার আসত, বসত, তাই অফিসের সেটআপ করা হয়েছিল। আমি ব্যক্তিগত কাজে ওইটা ব্যবহার করিনি।
এদিকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শনে আসেন ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও ভারপ্রাপ্ত) প্রশান্ত কুমার বৈদ্য। তবে এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।