বিশ্বের অতিধনীরা তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন ও সম্পদ অপচয়ে পরিবেশের প্রতি এক অমানবিক ও অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ প্রদর্শন করছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে জানা যায়, অতিধনীরা মাত্র ৯০ মিনিটে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করেন, তার গড় একজন ব্যক্তির সারা জীবনের কার্বন নিঃসরণের সমান। এ পরিসংখ্যান আমাদের দেখায়, কীভাবে কিছু মানুষ তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য পৃথিবীকে বিপন্ন করে আসছে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইলন মাস্ক বিশ্বের অতিধনীদের একজন। তার দুটি ব্যক্তিগত বিমান বছরে ৫,৪৯৭ টন কার্বন নিঃসরণ করে, যা একজন সাধারণ মানুষের ৮৩৪ বছরের কার্বন নিঃসরণের সমান। মাস্কের মতো অতিধনীরা নিজেদের বিলাসিতার জন্য পরিবেশের ক্ষতি করছেন এবং তাদের কর্মকাণ্ডের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন আরও তীব্র হচ্ছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিশ্বের ৫০ অতিধনীর মধ্যে ২৩ জনের ব্যক্তিগত বিমান চিহ্নিত করা গেছে। বাকি ২৭ জনের ব্যক্তিগত জেট বিমান নেই, না হয় তারা তাদের বিমান সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেননি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এই ২৩ ব্যক্তি গড়ে ১৮৪ বার ব্যক্তিগত বিমানে ভ্রমণ করেছেন এবং আকাশে কাটিয়েছেন গড়ে ৪২৫ ঘণ্টা। এটাই বোঝায়, তাদের ভ্রমণের পরিমাণ একসঙ্গে ২৩ জনের ১০ বার পৃথিবী ভ্রমণের সমান।
এছাড়াও, এই ২৩ জন ২০২৩ সালে গড়ে প্রতি জনে দুই হাজার ৭৪ টন কার্বন নিঃসরণ করেছেন। এই পরিমাণ কার্বন একজন সাধারণ মানুষ গড়ে ৩০০ বছর ধরে বের করে। এমনকি, এই পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ বিশ্বের অত্যন্ত গরিব ৫০ শতাংশ মানুষের জন্যও দুই হাজার বছর ধরে নিঃসরণের সমান।
সম্প্রতি অতিধনীদের জন্য সুপারইয়ট একটি সাধারণ শৌখিনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১৫০টি নতুন সুপার ইয়ট বাজারে আসে, যা প্রতি বছর ৫,৬৭২ টন কার্বন নিঃসরণ করে। অতিধনীরা নিজেদের বিলাসিতা বাড়াতে পরিবেশের প্রতি একেবারে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন।
অক্সফাম খুঁজে পেয়েছে, ১৮ অতিধনীর কাছে ২৩টি সুপারইয়ট রয়েছে, প্রতিটি থেকে প্রতি বছর ৫ হাজার ৬৭২ টন কার্বন প্রকৃতিতে মিশছে, যা অতিধনীদের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত বিমান থেকে কার্বন নিঃসরণের তিনগুণ বেশি।
প্রসঙ্গক্রমে, বিখ্যাত কোম্পানি ওয়ালমার্টের উত্তরাধিকারী ওয়ালটন পরিবার তিনটি সুপারইয়ট পরিচালনা করে, যা বছরে ৫৬ হাজার নটিক্যাল মাইল ভ্রমণ করে এবং ১৮ হাজার টন কার্বন নিঃসরণ করে। এ পরিমাণের ফলে শুধু পরিবেশই নয়, বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন হচ্ছে।
উল্লেখ্য, অতিধনীদের পরিবেশের প্রতি এ অমানবিক ও অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ আমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন করে; তারা কি নিজেদের বিলাসিতা বজায় রাখতে পরিবেশের ক্ষতি করতে প্রস্তুত? তাদের এহেন কর্মকাণ্ড বিশ্বের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করছে। তারা যদি নিজেদের বিলাসিতা কমিয়ে পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হন, তবে এটি আমাদের প্রজন্মের জন্য একটি সুখবর হবে। কিন্তু যতক্ষণ না তারা নিজেদের জীবনযাত্রা পরিবর্তন করছে, ততক্ষণ পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হতে থাকবে।