গাজার যোদ্ধাদের সংগঠন হামাসের নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। তাদের হত্যার দাবির পর ইসরায়েলকে কড়া বার্তা দিয়েছে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিজবুল্লাহ।
শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদেনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে হিজবুল্লাহ বলছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ নতুন সংঘাতময় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে ইরান জানিয়েছে, ন্যক্কারজনক এ হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিরোধের চেতনা আরও শক্তিশালী এবং বেগবান হবে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে নতুন একটি পর্ব শুরু হচ্ছে। এখন থেকে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভৃল নিশানার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে।
এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ একটি নতুন এবং ক্রমবর্ধমান পর্যায়ে রূপান্তরের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে প্রথমবারের মতো নির্ভুল নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার করা হবে।
লেবাননের এ যোদ্ধাগোষ্ঠী জানিয়েছে, গত ১ অক্টোবর থেকে লেবাননে স্থল অভিযান শুরুর পর ইসরায়েলের অন্তত ৫৫ সেনা নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫০০ সেনা ও অফিসার।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের ৮২৮তম বিসলামাক ব্রিগেডের একটি দল বুধবার (১৬ অক্টোবর) রাফার তাল আল-সুলতান এলাকায় টহল দিচ্ছিল। সেখানে একটি ভবনে তিন সশস্ত্র ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয় এবং তারা ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। তখনো সেনারা জানতেন না তারা কত বড় সাফল্য অর্জন করেছেন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেনারা সেই ভবনে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা অবাক হন। কারণ, তিনজনের একজন অবিকল সিনওয়ারের মতো দেখতে। শেষমেশ ডিএনএ ও দাঁত পরীক্ষায় সেনাদের ধারণা সত্য প্রমাণিত হয়।
ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে নিহত হওয়ার সময় সিনওয়ারের সঙ্গে কোনো ইসরায়েলি বন্দি ছিল না, যাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠে আসছিল সিনওয়ারের বিরুদ্ধে। এমনকি গাজার এই যোদ্ধা কোনো টানেলে লুকিয়েও ছিলেন না। বরং তার সশস্ত্র সহযোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করতে করতে নিহত হয়েছেন।
আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানান, তারা জানতেন না সিনওয়ার সেখানে ছিলেন। তবে তারা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তিনজনকে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে পালাতে দেখে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালান। সিনওয়ার একা একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন এবং ড্রোনের মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করে হত্যা করা হয়।
হামাসের পলিটব্যুরোার প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ নিহতের পর তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন সিনওয়ার। স্থানীয়ভাবে আবু ইব্রাহিম নামেও পরিচিত সিনওয়ার। তিনি ১৯৬২ সালে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়স যখন ১৯ তখন ইসলামী আন্দোলনের জন্য প্রথমবার ইসরায়েল তাকে গ্রেপ্তার করে।
কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ২৫ বছর বয়সে ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি হামাসের নিরাপত্তা শাখা আল মাজদ প্রতিষ্ঠা করেন। এই শাখার সদস্যরা তথাকথিত নৈতিকতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের এবং ইসরায়েলের সাথে সহযোগিতা করার জন্য সন্দেহভাজনদের ওপর দমন-পীড়ন, নির্যাতন চালায়।
১৯৮৮ সালে তাকে ইসরায়েলি বাহিনী আবারও গ্রেপ্তার করে। বিচারে সিনওয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ডিত হন। কিন্তু ২০১১ সালে গাজায় হামাসের হাতে বন্দি থাকা একজন ইসরায়েলি সৈনিকের বিনিময়ে মুক্তি পান ১ হাজার ২৭ ফিলিস্তিনি বন্দি। তাদের মধ্যে তিনিও ছিলেন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলার পরিকল্পনাকারী ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার; আইডিএফ এমনটিই বিশ্বাস করে। এর প্রমাণ হিসেবে তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। বলা হয়, তিনিই ছিলেন সেই হামলার মাস্টারমাইন্ড।