বিশ্ব

সেপ্টেম্বরে ৮৩ সহিংসতার ঘটনায় নিহত ১৬

সেপ্টেম্বরে ৮৩ সহিংসতার ঘটনায় নিহত ১৬


গত সেপ্টেম্বর মাসে সারাদেশে কমপক্ষে ৮৩ টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৬ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭০৬ জন। সহিংসতার ৮৩টি ঘটনার মধ্যে ৪৫টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলের কারণে, ২৩টি বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে, ৫টি আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলে ও ১০টি ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন দলের মধ্যে।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) প্রকাশিত হিউম্যান রাইট্স সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)-এর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর সেপ্টেম্বর মাসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে মানবাধিকার পরিস্থিতির কিছু বিষয়ে উন্নতি ঘটলেও সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যাঞ্জক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্রিক রাজনৈতিক সহিংসতা, গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা, রাজনৈতিক মামলা ও গ্রেপ্তার, সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ, শ্রমিক হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যু, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি নির্যাতন ও হত্যা, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।

এইচআরএসএস আরও বলছে, এ মাসে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে বাঙালি-পাহাড়িদের সংঘর্ষে ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৬ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনায় পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় ১ জন শ্রমিক পুলিশের গুলিতে নিহত ও অনেক আহত হয়েছেন। এতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকটি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে কমপক্ষে ৮৩ টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৬ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭০৬ জন। সহিংসতার ৮৩টি ঘটনার মধ্যে ৪৫টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলের কারণে, ২৩টি বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে, ৫ টি আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলে ও ১০টি ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন দলের মধ্যে। নিহত ১৬ জনের মধ্যে অন্তর্কোন্দলে আওয়ামীলীগের ১ জন ও বিএনপির ৮ জন নিহত হয়েছেন। বাকি ৭ জন নিহত হয়েছেন বিরোধী পক্ষের হামলায়। ১৬ জন নিহতদের মধ্যে ১১ জন বিএনপির আর ৫ জন আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক। এছাড়াও সারাদেশে আধিপত্য বিস্তার ও দুর্বৃত্তের হামলায় আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জামায়াতের আরও অন্তত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সকল সহিংসতায় কমপক্ষে ২৫০ টি ঘরবাড়ি, যানবাহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এটা অতান্ত দুঃখজনক যে, নরসিংদির পলাশে ও ঢাকার কারওয়ান বাজারে শিক্ষার্থী ও বিএনপির বাজার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীক সহিংসতায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। সেপ্টেম্বর ২০২৪ মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ও নেতাকর্মীদের নামে কমপক্ষে ৯২ টি মামলা হয়েছে। এসকল মামলায় ৬৮৭৬ জনকে নাম উল্লখে করে এবং ১২৫৬২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে গনপিটুনির বিষয়ে বলা হয়, এ মাসে গণপিটুনির ৩৬টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১৪ জন। রাজশাহীতে গণপিটুনিতে আহত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গণপিটুনির শিকার ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের সামনে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

সাংবাদিক হেনস্তা ও নির্যাতনের ব্যাপারে এতে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে অন্তত ১৮ টি ঘটনায় ৯০ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন: আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ২১ জন, লাঞ্চনা শিকার হয়েছেন ২ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ৩ জন, ও গ্রেফতার হয়েছেন ০২ জন। এছাড়াও ৫ টি মামলায় ৬২ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, এসময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর কমপক্ষে ০২টি হামলার ঘটনায় ১টি মন্দির ও ৪ টি প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, নোয়াখালী, নারায়নগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও শরীয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মাজারে হামলা, ভাংচুর, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সকল ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯০ জন।

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে সুপারিশ জানিয়ে হিউম্যান রাইট্স সাপোর্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, সুশীল সমাজ ও বিরোধী দলসমূহের সাথে আলোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা জরুরী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগনের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর এ সকল বিষয় বাস্তবায়ন করতে না পারলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে। তাই “হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি”র পক্ষ থেকে সরকারকে মানবাধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে এবং দেশের সকল সচেতন নাগরিক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন গুলোকে আরো সোচ্চার হওয়ার আহবান জানানো যাচ্ছে।





Source link

Shares:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।