দেশে ফিরেছেন জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে বুধবার (২ অক্টোবর) ফেসবুক পোস্ট দিয়ে তিনি নিজেই এ তথ্য জানান।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ, সহি-সালামাতে প্রিয় মাতৃভূমিতে এসে পৌঁছলাম। পরম করুণাময় এই প্রত্যাবর্তনকে বরকতময় করুন। দুআর নিবেদন।
এদিকে তুমুল জনপ্রিয়তার পরও মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীকে কেন দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল, এমন প্রশ্ন ঘুরছে নেটিজেনদের টাইমলাইনে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিজানুর রহমান আজহারীর হঠাৎ করে দেশ ছাড়ার কারণ কী এ প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব পাওয়া যায়নি। তবে সেই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজহারি নিজেই পারিপার্শ্বিক কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেন। তবে সেই কারণগুলো প্রচ্ছন্ন চাপের কারণে বিস্তারিত তা উল্লেখ করেননি মাওলানা আজহারী।
দেশ ছাড়ার প্রসঙ্গ নিয়ে একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে আজহারীর এক মাহফিলে ১২ ভারতীয় নাগরিকের ধর্মান্তরের একটি ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ভারত সরকারের অদৃশ্য চাপেই আজহারীকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।
মাওলানা আজহারীর দেশ ছাড়ার বিষয়ে মনিরুল ইসলাম নামে এক ভক্ত বলেন, স্পষ্টভাষী এবং সাহসী একজন বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। আজহারী মাহফিলগুলোতে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি কাউকে পরোয়া করতেন না। তাছাড়া তার বিভিন্ন মাহফিলে এসে অসংখ্য বিধর্মী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতেন।
আজহারী সাহেব শুধু তৎকালীন সরকারের জন্যই আতঙ্কের কারণ ছিল না উল্লেখ করে আজহারী ভ্ক্ত বলেন, অসংখ্য ভণ্ডপীর-মুরিদপন্থি লোকজনেরও চক্ষুশূল ছিলেন। তারাও বিভিন্নভাবে আজহারী সাহেবকে ওয়াজের ময়দান থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করেছিল সে সময়।
ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আরেক আজহারীর ভক্ত বলেন, মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নন, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ তার আলোচনা শুনতেন। এমনকি বাংলাদেশে এসে অনেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। যে কারণে আন্তর্জাতিক চাপের মুখেই তাকে দেশ ছাড়া করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গক্রমে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে জয়পুরহাট জেলায় মাওলানা আজহারীর এক মাহফিলে ধর্মান্তরের একটি ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে লক্ষ্মীপুরে আরেক মাহফিলে ১২ জন ভারতীয় নাগরিকের ধর্মান্তরের ঘটনাও ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। আলোচিত ওই হিন্দু পরিবারটি এসেছিল ভারত থেকে। সে সময় বাংলাদেশের পুলিশ ১২ জনকেই আটক করে এবং তাদের ভারতে ফেরত পাঠানো হয়।
এছাড়া সে সময় আওয়ামীলীগ সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মাওলানা আজহারীকে জামাতসংশ্লিষ্ট বলে ট্যাগ দেন। এ বিষয় নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল তৎকালীন সময়।
এদিকে এ ঘটনা পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমকে মিজানুর রহমান আজহারীর এক আত্মীয় জানান, সবশেষ দুটি মাহফিলের সময় বিভিন্ন জায়গায় বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন মাওলানা আজহারী।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার ঘোষণা দেন মিজানুর রহমান আজহারী। এরপর থেকে মালয়েশিয়াতেই অবস্থান করছিলেন তিনি। তখন এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে এখানেই এ বছরের তাফসির প্রোগামের ইতি টানতে হচ্ছে।
তাই, মার্চ পর্যন্ত আমার বাকী প্রোগ্রামগুলো স্থগিত করা হলো। রিসার্চের কাজে আবারও মালয়েশিয়া ফিরে যাচ্ছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুযোগ করে দিলে আবারও দেখা হবে ও কথা হবে ইনশাআল্লাহ।